বিনোদন
জীবন কখনও একই গতিতে বয়ে যায় না। প্রতিটা মায়ের লড়াই একেবারে আলাদা। তাই কঠিন বাস্তবকে সঙ্গী করেই একাবলীর লড়াই।

দুই ছেলের সঙ্গে অভিনেত্রী একাবলী খান্নাছবি: সংগৃহীত
Authored By:
Published on
:
2 min read
সিনেমার পর্দায় সদা হাস্যমুখ। বলিউড থেকে টলিউড তাঁর নজরকাড়া অভিনয়ে মুগ্ধ দর্শক। অভিনেত্রী একাবলী খান্না। যাঁর জীবনও খানিক সিনেমার মতোই। ২১ বছর বয়সে প্রথম সন্তান বারিজের জন্ম। ২৬ বছরে কোলজুড়ে আসে ছোট ছেলে বিহান। এক বছর কাটতে না কাটতেই ডিভোর্স। সেই থেকেই সিঙ্গল মাদার হিসেবে জার্নি শুরু অভিনেত্রীর। কঠিন সময়ে দাঁড়িয়েও সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন এই শহরেই দুই সন্তানকে বড় করবেন। কারণ, একটাই। কলকাতার প্রতিটা অলিগলির সঙ্গে জড়িয়ে তাঁরও ছোটবেলা। এই চেনা ছন্দ থেকে বেরতে চাননি একাবলী।
একা মায়ের জার্নি যে খুব সহজ নয়, তা শুরুর দিন থেকেই বুঝেছিলেন তিনি। তবে ছেলেদের মুখ চেয়েই প্রতিদিন পায়ের তলার জমি আরও শক্ত করেছেন। সন্তান জন্মের সেই মুহূর্ত ভাগ করতে গিয়ে দীর্ঘ বছর পরেও আবেগপ্রবণ অভিনেত্রী। বললেন, ‘সত্যি বলতে এই অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না আজও। জীবনের কোনও কিছুর সঙ্গেই যে এর তুলনা চলে না।’
কিছু মানুষের জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপের সঙ্গেই হয়তো বা জড়িয়ে থাকে একরাশ যন্ত্রণা। জন্মের পরমুহূর্তেই মাকে হারিয়েছিলেন একাবলী। তাঁর কথায়, ‘আমার জীবনটাই আসলে খুব অন্যরকম। জন্মের সময়ে মাকে হারিয়েছি। চোখেই দেখিনি কখনও তাঁকে। আমায় জন্ম দেওয়ার পরেই মায়ের ব্রেন হ্যামারেজ হয়। তাই নিজে মা হওয়ার ক্ষেত্রে খুব ভয় পেয়েছিলাম। খালি মনে হতো মায়ের সঙ্গে যা ঘটেছে, সেটাই যদি আমার সঙ্গেও হয়! সব কিছু ভালো ভাবে হয়েছে এটাই ঈশ্বরের কৃপা।’
মা না থাকা যে যন্ত্রণা, সেটা হয়তো ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। হয়তো বা মা থাকলে জীবন খানিক অন্যরকমই হতো। তবু তাঁর বাবার পরিবারের সকলেই বিশেষত ঠাকুমা, পিসি তাঁকে আগলে রেখেছিলেন। তাই অভিনেত্রীর নাকি অভিযোগের কোনও জায়গাই নেই কারও প্রতি। বর্তমানে বড় ছেলে নিচ্ছে পিএইডি-র প্রস্তুতি। পেইন্টিং নিয়ে মাস্টার্সে ডিপার্টমেন্টের টপার। অন্য দিকে, ছোট ছেলে বেঙ্গালুরুতে পড়াশোনা করছে। পাশাপাশি কাজও করছে।
দুই ছেলেকে একা বড় করার অভিজ্ঞতা প্রসঙ্গে একাবলী বলেন, ‘নিজের জীবন থেকে বুঝেছি মা হওয়ার কোনও ফর্মুলা হয় না। এক মায়ের দুই সন্তান, তাতেও বড় করার নিয়ম ভিন্ন। মায়েদের একটা রুল বুক থাকে। সেটা সবার জন্য সমান হওয়াটা খুব দরকার। তবে এটুকু বলতে পারি, মা একজন সন্তানের জীবনের প্রথম শিক্ষক। তাই যে পথ দেখাবে, তা যেন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা হয়।’
মা ও ছেলেদের সুন্দর মুহূর্তছবি: সংগৃহীত
একটা সময় অর্থের খুব দরকার হলেও সন্তানদের বড় করায় প্রায়োরিটি দিয়েছেন তিনি। ছেড়েছেন মুম্বইয়ের বহু সিরিয়ালের অফার। তবে শুধু একা মায়ের জার্নিই কঠিন হয় বলে মনে করেন না একাবলী। বরং, সব মায়ের ক্ষেত্রেই সন্তানকে সঠিক মানুষ করা কঠিন কাজ বলে মনে করেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘পার্টনার থাকলে দায়িত্বটা হয়তো ভাগ হয়ে যায়। তবে সবকিছুর ভালো-মন্দ আছে। আমি কখনওই চাই না কোনও সন্তান বাবা-মায়ের কলহ দেখে বড় হোক। আর একটা জিনিসে ভীষণ বিশ্বাস করি। সবসময় পজ়িটিভ এনার্জির মানুষদের সঙ্গে মেলামেশা করা উচিত। সম্মান সবাইকে করলেও, প্রয়োজনে দূরত্ব বজায় রাখা উচিত।’
জীবনে এগিয়ে যাওয়ার পথে ডিসিপ্লিনড হওয়াটা খুব দরকার বলে মনে করেন তিনি। একাবলীর কথায়, ‘সবাই পৃথিবীতে নিজের মতো করে লড়াই করতে এসেছে। এটাই তো জীবন। একজন বাচ্চার সঙ্গে অন্যের তুলনা, অযথা কম্পিটিশন সমাজের একাংশকে নষ্ট করে দিচ্ছে। তার চেয়ে বরং কঠিন এই দুনিয়ায়ও স্বপ্নগুলোকে বাঁচিয়ে রাখা উচিত। আফটার অল একটাই তো জীবন।’
টলিউড
tollywood actress
Ekavali Khanna
Related Stories
No stories found.